Wednesday, May 23, 2018

ধর্মীয় সন্ত্রাস, আমাদের ধর্মীয় শিক্ষা ব্যাবস্থা ও করনীয়।

এই লেখাটি কোন সরকার, রাজনৈতিক দল বা কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সমালোচনার জন্য নয়। লেখার উদ্যেশ্য  হচ্ছে ধর্মীয় অজ্ঞতা, ধর্মীয় অপ-প্রচার ও অপ-প্রচার জনিত সৃষ্ট সমস্যা এবং এই সমস্যা সমাধান ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত। কারন ধর্মীয় অজ্ঞতা, ধর্মীয় অপ-প্রচার সংক্রান্ত কারনে সৃষ্ঠ সমস্যা সমূহ এখন জাতীয় সমস্যায় রুপ নিয়েছে এবং খুব এবং সরকার চাইলে সহজেই ই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। সহজ মনেকরার কারন হচ্ছে ইতোপূর্বে ব্লগারদের ধর্মীয় সন্ত্রাসের কারনে ব্লগ বিরোধীদের হাতে রাজীব নিলয় নামের দুই ব্লগার খুন হয়েছিল এবং এই নিয়ে যখন বিভিন্ন শিবিরে উত্তেজনা চলছিল ঠিক তখনি দেশনেত্রী মাননীয় শেখ হাছিনার ধর্ম নিয়ে বারাবারি না করার এক কথায় ব্লগ সন্ত্রাস বন্ধ হয়ে যায়। আমরা দেখেছি সরকারকে খুব সহজে এক রাতে হেফাজত ইসলামের তান্ডব দমন করতে। ধন্যবাদ জানাই প্রধান মন্ত্রিকে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধন্ত গ্রহনের জন্য। তানাহলে হয়ত ঝরে যেত আরো কিছু প্রান। ধর্মীয় সমস্যাকে জাতীগত বিভেদে রুপ দেয়ার জন্য যেসকল কট্টর পন্থী ইসলামিক দল, প্রগতিশীল, ধর্মীয় কটাক্ষকারী, বিভিন্ন ব্লগার ও উস্কানীদাতারা (All are agent) নিয়মিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনের পাশা-পাশি চলমান সাধারন শিক্ষা ব্যাবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়টি বাধ্যতা মূলক এবং এর পাঠ দানের উপর জোর দেওয়া হলে (ইংরেজী শিক্ষার ক্ষেত্রে যেমন জোর দেওয়া হয়ে থাকে) এমনিতেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কারন শুধুমাত্র সঠিক ধর্মীয় শিক্ষা না পাওয়া বা জানার কারনে বিভিন্ন  ধর্মীয় সন্ত্রাসিরা বিভ্রান্তি তৈরীর সাহস বা সুযোগ পাচ্ছে।
 
বর্তমানে ধর্মীয় অজ্ঞতা ধর্মের অপব্যখ্যা জনিত কারনে সৃষ্ঠ বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে ভয়াবহ এবং প্রধান হচ্ছে জঙ্গিবাদ যা যুব সমাজকে বিপদ্গামী করে তুলা সহ দেশে অরাজকতার সৃষ্টি করছে। কথিত ধর্মগুরুরা পরিকল্পিতভাবে ধর্মের অপব্যখ্যার মাধ্যমে দেশের উদিয়মান তরুনদের হাতে যিহাদের নামে অস্ত্র তুলে দিয়ে সামাজিক সংঘাত সৃষ্ঠি করছে। এক সময় মনে করা হতো শুধুমাত্র মাদ্রাসার ছাত্ররাই (সল্প শিক্ষিত মনে করা হয়) জঙ্গীবাদের সাথে জড়িত, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বিষয়টি ভুল প্রমানিত হয়েছে এবং দেশের নামী-দামি বিশবিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রদেরও জঙ্গিবাদের সাথে জড়িয়ে পরতে দেখা গিয়েছে। এবিষয়ে অনেক প্রানহানীর খবর আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখেছি ও পড়েছি।

ধর্ম ব্যাবসায়ী, ভন্ডপীর, ফকির-ফাকরা, ফতোয়াবাজ, কাঠ মৌলবি, হাদিস-কুরানের ভুল ব্যাখ্যাকারী, ধর্ম ব্যাবসায়ী ইত্যাদি শ্রেনীর (যারা হাদিস-কুরআন ধর্মের ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে সামাজিক সমস্যা সৃস্টি করছে) লোক হতে সাবধান থাকার কথা আমরা হর-হামেসাই শুনে থাকি এবং শোনার যথেষ্ট কারনও আছে। এই শ্রেনীর ধর্মীয় ভুল ব্যাখ্যাকারীদের বিভিন্ন ধর্মীয় ভুল ব্যাখ্যার কারনে দেশের সাধারন মানুষের মধ্যে যেমন ধর্মীয় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে ( যেমন,কুরবানির গোস্ত ভাগে বন্টন না করলেও চলবে, সবে বরাতের দিন গরিব মানুষদের রুটি-হালুয়া খাওয়ানো গুনা, মিলাদ গুনা, তারাবি নামাজের রাকাত নিয়ে বিতর্ক, রাষ্ট্রীয় আইনকে ঘৃনা করো, কারন তা কুরআনের আইন নয়, সিয়ারা মুসলমান নয়, মহরমের দিন শোক প্রকাশের নয়, মুখে বলেই তালাক হবে, মুকছেদুল মুমিন সহ বিভিন্ন ধর্মীয় বই ভুল, কবর বাধানো গুনা, পিরের মাজার গুনা, হাদিস পরলেই হবেনা ছহি হাদিস হতে হবে ধরনের বিভিন্ন কথা যার অনেক কিছু আমরা বাল্যকাল হতে পালন করে আসছি বা বইতে পড়েছি) তেমনি অনেক ক্ষেত্রে পীর-ফকিরদের জীন-পরিদের আসর বলে ভুল চিকিতসা প্রদানের কারনে ঘটছে মানুষের মৃত্যু, সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় মতবাদ ধর্মীয় বিভ্রান্তি, জঙ্গিবাদ (মরলে শহিদ বাচলে গাজি) সাম্প্রদায়ীকতার মতো ভয়ানক সামাজিক ব্যাধি। ফলে আমরা অনেকেই এই শ্রেনীর ধর্মীয় প্রতিনিধিদের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলছি। শুধু তাই নয় এই ধর্মীয় বিভ্রান্তির কারনেই আন্তর্জাতিক ইসলাম বিরোধী চক্রের অর্থায়নে লালিত এক শ্রেনীর নাস্তিক মুরতাদরা বিশের ২য় বৃহত জনগোষ্ঠির প্রিয় শান্তির ধর্ম ইসলামকে নিয়মিতভাবে কটাক্ষ করার সাহস পাচ্ছে এবং করে যাচ্ছে। একটু মনযোগ সহকারে লক্ষ করলেই বোঝা যায় সংশ্লিষ্ট সমস্যা সৃষ্টিকারী ব্যাক্তিরা প্রত্যেকেই পুজি পেশা হিসাবে ধর্মীয় কিতাব ধর্মকে বেছে নিয়েছে।

আমি মনে করি উপরোক্ত প্রতিটি সমস্যার জন্য যতোটানা সংশ্লিষ্ট কপট ব্যাক্তিরা দায়ী তার চাইতে বেশি দায়ী যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা দেশের ধর্মীয় শিক্ষা ব্যাবস্থা ও সংশ্লিষ্টরা। সুযোগ সন্ধানীরা কেবল দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে মাত্র। দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিবর্তন আনা হলেও ধর্মীয় শিক্ষা অর্জনের বিষয়ে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। আমাদের স্কুল-কলেজের চলমান শিক্ষা ব্যাবস্থায় যেমন সাধারন শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়ে কম গুরুত্ত দেওয়া হয় (অনেকে মনে করেন ধর্ম অজ্ঞদের জন্য) তেমনি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যাবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি বেশি গুরুত্ত দেওয়া হয় (আর কোন শিক্ষার দরকার নাই, একমাত্র কুরানের শিক্ষাই শিক্ষা)। এখানে উভয় শিক্ষা ব্যাবস্থাতেই গলদ থেকে যাচ্ছে নতুবা ইচ্ছে করেই গলদ রেখে ধর্মীয় বিশৃঙ্খলা তৈরীর মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্ম গোত্রের মাঝে বিবেধ তৈরী করা হচ্ছে। এখানে একে অপরকে প্রতিদন্দী মনে করে এবং সর্বদা নেতিবাচক সমালচনা করছে। এক্ষেত্রে সাধারন শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন ও মাদ্রাসা শিক্ষায় সাধারন শিক্ষা বাধ্যতা মূলক ও জোর দিতে হবে যেমন আমরা ইংরেজী শিক্ষার উপর জোর দিয়ে থাকি। পাশা-পাশি এই মন্ত্রনালয়ের দায়ীত্তে ধর্মীয় ব্যাক্তিত্যদের দেওয়া উচিত, কোন ভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী বা নাস্তিকদের নয়।

পৃথিবীতে ধর্ম ছাড়া কোন জাতী নাই এবং সকল জাতীই কোন না কোন ধর্ম পালন বা অনুসরন করে থাকে। ধর্ম হচ্ছে অদৃশ্যে বিশশাস ও মানব জাতীর জন্য পুর্নাঙ্গ জীবন বিধান। সকল ধর্ম গ্রন্থে সততা, শান্তি, মানবতা ও অসাম্প্রদায়ীকতার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং ধর্মকে রাখতে হবে সব কিছুর উর্ধে এবং প্রতিটি নাগরিকের ধর্মীয় নির্দেশনা ভাল করে জানতে হবে। কারন ধর্ম মানুষকে মুক্তির পথ দেখায়, মানুষকে ভালোবাসতে ও অসাম্প্রদায়ীকতা শেখায়।

এবার আসল কথায় আসা যাক। আমাদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কুরআন শরীফ ভিন্ন ভাষায় (আরবী) রচিত হওয়া এবং ধর্মীয় শিক্ষা ব্যাবস্থায় গলদ থাকার কারনে আমরা বেশিরভাগ লোক এটি পরতে বা এর সঠিক অর্থ বুঝতে পারিনা। ধর্মীয় বা যেকোন নির্দেশনা যদি না বোঝা যায় তাহলে সেটা মানা তো দূরে থাক মানার প্রয়োজনীয়তাও ভুলে যেতে হয়। শুধুমাত্র ধর্মীয় অজ্ঞতার কারনে অর্থাৎ আরবি ভাষা না বোঝা ও কুরআন শরীফের নির্দেশনা সমুহ সঠিকভাবে না জানার কারনে দেশে উপরোক্ত প্রতিটি সমস্যা সহ বহুবিধ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে এবং একমাত্র আরবি ভাষা ও কুরআন শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমেই এ সকল সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। একজন আদর্শ মানুষ হওয়ার জন্য সাধারন ধর্মীয় উভয় শিক্ষাই সমভাবে প্রয়োজন। কারন ধর্মীয় শিক্ষা না থাকলে মানুষ হয়ে উঠে পশুর ন্যায়, মানবীয় গুনাবলি রাস পায়। পবিত্র কুরআন হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ধর্মীয় নীতিমালা বা পূর্ণাজ্ঞ জীবন বিধান এবং ধর্ম পালনের জন্য প্রতিটি মুসলমানকে এই কিতাবের প্রতিটি নির্দেশনা ভালভাবে জানতে হবে। শুধুমাত্র আরবি ভাষায় রচিত হওয়ার কারনে বেশিরভাগ মানুষ কুরআন শরীফের নির্দেশনা বুঝতে পারেনা, ফলে ধর্ম পালনের জন্য ধর্ম গুরুদের উপর নির্ভর করতে হয়। আর এই ধর্মীয় অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেনীর কপট ধর্মীয় গুরুরা ইসলাম ধর্মের ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে কোমলমতি বালকদের করে তুলছে বিপদ্গামী। বিভ্রান্তমুলক ধর্মীয় অপ-প্রচার ভুল নির্দেশনার মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্ম গোত্রের মাঝে বিবেধ তৈরী করছে। এক্ষেত্রে সকলে যদি কুরান শরীফের নির্দেশনা সমুহ যদি সঠিকভাবে জানে তাহলে চাইলেই কেউ ভুল বোঝাতে পারবে না। ফলে এ ধরনের ধর্মীয় সন্ত্রাস সৃষ্টির কোন সুযোগ থাকবে না।

কাজেই আমাদের মুল জাগায় পরিবর্তন আনতে হবে। চলমান শিক্ষা ব্যাবস্থায় ইংরেজী শিক্ষার মতো আরবী ও কুরআন শিক্ষা (মুসলিমদের জন্য) বাধ্যতামূলক করা সহ পাঠ দান পক্রিয়ায় জোর দেওয়া হোক। শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই প্রতিটি শিশুর মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ তৈরী করতে হবে। পাশা-পাশি ধর্মের অপব্যাখ্যাকারী, ধর্মকে কটাক্ষকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যাবস্থা নিতে হবে। কারন ধর্ম মানা না মানা কারো ব্যাক্তিগত ব্যাপার, কিন্তু তাই বলে কারো ধর্মকে কটাক্ষ করার অধিকার কারোই নাই। কারন দেশের বেশির ভাগ লোক ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং ধর্মকে কটাক্ষ করা মানে এই লোক গুলোর অনুভুতিকে কটাক্ষ করা। তাই এবিষয়ে কোন ছাড় দেওয়া যাবেনা। সুতারাং কুরান শরীফের নির্দেশনা সমুহ অনুবাদ সহ জানা এবং সঠিক ধর্মীয় শিক্ষা অর্জনেরর জন্য শিশু শ্রেনী হতে আরবী শিক্ষা বাধ্যতা মূলক (মুসলিমদের জন্য) করা সহ সম্পুর্ন শিক্ষা জীবনে কুরান শিক্ষা বাধ্যতা মূলক করা হোক। এতে ধর্ম তার নিরপেক্ষতা হারাবেনা।

আমি মনে করি চলমান শিক্ষা ব্যাবস্থায় যদি এই পরিবর্তন আনা যায় এমনিতেই ধর্মীয় সন্ত্রাস বন্ধ হয়ে যাবে। আইন প্রয়োগ করে এই ধর্মীয় সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়, আমরা এখনো পারিনি। শাস্তি প্রদান সাময়ীক সমাধান, স্থায়ী নয়। আর যেকোন সমস্যা যদি শুরুতেই শেষ করে দেওয়া যায়, তাহলে সেটা কোনদিন হুমকি বা সমস্যা হতে পারেনা। এক্ষেত্রে আমরা ইরানকে অনুসরন করতে পারি। 

No comments:

Post a Comment